খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ আষাঢ়, ১৪৩১ | ২৭ জুন, ২০২৪

Breaking News

  মুন্সিগঞ্জেরের মোল্লাকান্দিতে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৫
  সাবেক আইজিপি বেনজিরের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে

ভারতে চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা ও বেনাপোল প্রতিনিধি

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কোরবানির পশুসহ সব জিনিসের দাম বাড়লেও এবার কমেছে চামড়ার দাম। ফলে ঈদের পর অবৈধ পথে ভারতে চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে সতর্কতা জারি করেছে বিজিবি। এরইমধ্যে যশোরের সীমান্ত এলাকায় এবং সাতক্ষীরার ২৭৮ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি ও পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া সীমান্ত এলাকার সড়কগুলোতে যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, সাতক্ষীরায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দু’টি ব্যাটালিয়নের অধীনে জল ও স্থল মিলে সীমান্ত এলাকা রয়েছে ২৭৮ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ সীমান্তের প্রায় ৩০টি চোরাঘাট দিয়ে চামড়াসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানের অভিযোগ রয়েছে একাধিক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। দেশে সবচেয়ে বেশি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয় ঈদুল আজহায়। এ সময় দেশে বিভিন্ন ধরনের পশু কোরবানি করা হয়, যা থেকে সারা বছরের অন্তত ৬০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ হয়। আবার এই সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও পাচারকারী সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে কাঁচা চামড়া। এবার কোরবানির পশুর চামড়ার দাম অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় পাচারের আশঙ্কা বেশি করে দেখা দিয়েছে।

সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি সূত্র জানায়, ঈদের পর পশুর চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। একই সাথে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। চোরাই পথে গরু আমদানি ও চামড়া পাচার প্রতিরোধে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, একটা চামড়া প্রস্তুত করতে শ্রমিক মজুরি, লবণ, পরিবহন ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৩০০ টাকা পড়ে। সরকার একটা চামড়ার দাম এক হাজার টাকা বেধে দিলেও, বড় গরু ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং মাঝারি ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় কেনা যায়।

সাতক্ষীরার চামড়া ব্যবসায়ী অনিল কুমার দাশ জানান, ট্যানারি মালিক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ীরা। ট্যানারি মালিকরা সময়মতো বকেয়া পরিশোধ না করায় এবারও সাতক্ষীরায় কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে ধ্বস নামতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকী বলেন, সীমান্ত পথে চামড়া পাচার রোধে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সীমান্তের সড়কে কোনো চামড়াবাহী যানবাহন ঢুকতে পারবে না। অন্য জেলা থেকেও চামড়াবাহী কোনো যানবাহন সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ করতে পারবে না। তবে সাতক্ষীরা জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা তাদের সংগৃহীত চামড়া যশোর ও ঢাকার আড়ত এবং ট্যানারিতে নিয়ে যেতে পারবেন।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, জাতীয় সম্পদ চামড়া যেন নষ্ট না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কোরবানিদাতাদের স্বার্থে সরকার এবার প্রতি বর্গফুট চামড়ার মূল্য ৫-৭ টাকা বৃদ্ধি করেছে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকায় প্রতি পিস গরুর চামড়ার দাম হবে এক হাজার ২০০ টাকা ও সাতক্ষীরা জেলা পর্যায়ে দাম হবে এক হাজার টাকা।

অপরদিকে আজ মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহম্মেদ হাসান জামিল এ তথ্য জানিয়েছেন। ঈদের দিন বিকাল থেকে আগামী কয়েকদিন পর্যন্ত এ সতর্কতা জারি থাকবে বলে তিনি জানান।

চামড়া ক্রেতা মশিয়ার রহমান জানান, ৭০০ টাকায় কেনা চামড়া বিক্রির সময় ৫০০ টাকা বলছে। আর ছাগলের চামড়ার দাম ৫০ টাকা। এরকম দাম থাকলে চামড়া পাচার হতে পারে মন্তব্য করেন তিনি।

চামড়া বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছেন, নানা অজুহাত দেখিয়ে সেই দাম দেয়া হচ্ছে না। এবার লোকশান গুণতে হবে।

ঢাকা থেকে বেনাপোলে চামড়া কিনতে আসা ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার কোরবানির পশুর চামড়ার সরবরাহ কম। আবার মানও ভালো না। তাই বেশি দাম দিয়ে কিনতে পারছেন না।’

যশোর ৪৯ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আহম্মেদ হাসান জামিল বলেন, ‘কোরবানির পশুর চামড়া যাতে পাচার না হয়, সেজন্য সীমান্তে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এই সতর্কতা কয়েকদিন অব্যহত থাকবে।’

বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত জানান, কোরবানির পশুর চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার পাশাপাশি পুলিশও কাজ করছে। সীমান্ত অভিমুখে প্রবেশের সময় চালকদের জিজ্ঞাসাবাদসহ ও যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!